2024 সালের ইউপিএসসি পরীক্ষার ফলাফলে, ঝাড়গ্রাম জেলার বাসিন্দা মানস মাহাত ১৪তম স্থান অধিকার করেছেন, এবং সে কোচিং ছাড়াই এই উচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছেন।
ঝাড়গ্রাম জেলার বাসিন্দা মানস মাহাত কোচিং ছাড়াই সর্বভারতীয় চাকরির পরীক্ষায় সফল হয়েছেন। তাঁর বাড়ি নয়াগ্রাম ব্লকের প্রত্যন্ত চাঁদাবিলা গ্রামে অবস্থিত। ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউপিএসসি-র অ্যাসিস্ট্যান্ট জিওফিক্সিজ পদে পরীক্ষার ফাইনাল মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল এবং মানস মাহাত দেশের মধ্যে ১৪তম স্থান অর্জন করেছেন। তাঁর সাফল্যের খবরে ঝাড়গ্রাম জেলাবাসীরা অত্যন্ত খুশি।
ইউপিএসসি পরীক্ষা ছাড়াও, মানস মাহাত পূর্বেও মানস সিএসআর নেট এবং রাজ্যের সেট পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হন। তাঁর বাবা চুনারাম মাহাত খাদ্য দফতরের ফুড ইন্সপেক্টর পদ থেকে অবসর নেন। তারা মানসের বাড়িতে থাকেন। মানসের মা গন্ধেশ্বরী মাহাত। তারা তিন ছেলের পিতা-মা। বড় ছেলেটি বিদ্যুৎ দফতরে চাকরি করেন এবং মেজো ছেলেটি হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। সবচেয়ে ছোট ছেলেটি মানস। মানস স্থানীয় চাঁদাবিলা এসএসসি হাইস্কুল থেকে ২০০৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেন। ২০১০ সালে ঝাড়গ্রাম বাণীতীর্থ হাইস্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেন এবং ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে ফিজিক্স নিয়ে ভর্তি হন। পরে, ২০১৩ সালে স্নাতক পাশ করে খড়গপুর আইআইটিতে এমএসসিতে ভর্তি হন।
মানস মাহাত বলেছেন, “আমার বাড়িতে প্রচুর বই রয়েছে। ওই বই পড়া এবং বিষয়ের উপরে দক্ষতাই আমার সফলতা নিয়ে এসেছে। বইয়ের বিকল্প নেই। শুধুমাত্র বই এবং ইন্টারনেটের সাহায্যে আমি অ্যাসিস্ট্যান্ট জিওফিক্সিজ পদে উত্তীর্ণ হয়েছি। মাত্র দু’নম্বরের জন্য জিওসায়েন্টিস্ট পদ পাইনি। আশা করি ওখানে ওয়েটিং লিস্টে থাকব।”
সেখান থেকে 2015 সালে সিএসআর নেট এবং রাজ্যের সেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর, মানস গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, মাঝপথে তিনি ওই সিদ্ধান্ত বদলেন। ২০১৯ সালে মানস প্রত্যন্ত চাঁদাবিলা গ্রামে ফিরে এসেন। তারপর তিনি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন।
অ্যাসিস্ট্যান্ট জিওফিক্সিজ পদে চাকরির প্রসঙ্গে মানস বলেন, “আমি এমএসসিতে জিওফিজিক্সের কোনও পেপার পড়িনি। কিন্তু বিষয়টি ভালো লাগতে বলে আমি নতুন বই কিনে চাকরির পরীক্ষার জন্য পড়তে শুরু করি। এখানে বিষয়ের দক্ষতা ও গভীরতা খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। ২০২৩ সালে কলকাতায় গিয়ে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তারপর ওই পরীক্ষায় পাশ করতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লি ইউপিএসসি ভবনে গিয়ে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। গতকাল ২৩ ফেব্রুয়ারি মেধাতালিকা প্রকাশ হয়েছে। তাতে আমি ১৪তম স্থান অর্জন করতে পেরেছি।”
শনিবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুমন সাহু মানসকে পুষ্পস্তবক দিয়ে সংবর্ধনা জানান। সুমন সাহু বলেন, “সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়, কোনও রকম কোচিং বা ট্রেনিং ছাড়াই তিনি নিজে এই জায়গায় পৌঁছেছেন। তার জীবনযাত্রা খুবই সরল-সাদাসিধ। তিনি আমাদের এলাকার প্রত্যন্ত থেকে যে সর্বভারতীয় পরীক্ষা পাশ করেছেন, সেই দৃষ্টান্তে অনেক মানুষের উদ্দীপনা হয়েছে। আজ আমরা তার অনুপ্রাণিত এবং আপ্লুত অনুভব করছি। ঝাড়গ্রাম জেলাবাসী হিসাবে, নয়াগ্রামবাসী হিসাবে আমরা তাঁর জন্য গর্বিত। তাঁকে আমরা শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানাতে চাই।”